তিস্তা নদীর বিপদসীমার পরিমাপ পরিবর্তন

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১ জুন, ২০১৮
  • ১১০ বার

তিস্তা নদীর বিপদসীমার পরিমাপ (গেজ রিডার) আবারও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ নিয়ে দুই দফায় বিপদসীমার পরিমাপ বৃদ্ধি করা হলো ৩৫ সেন্টিমিটার। পূর্বের পরিমাপের চেয়ে এবার ২০ সেন্টিমিটার বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর আগে পরিমাপটির প্রথম দফায় ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি করা হয়েছিল।

সূত্র মতে উজানে গজলডোবা ব্যারেজ নির্মাণের ফলে তিস্তা নদীর প্রবাহ কমে যাওয়ায় পলি ও বালু পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী। ফলে উজানের সামান্য ঢলেই তিস্তা নদী বিপদসীমা অতিক্রম করে থাকে। অথচ নদীর চর ডুবে না।

এদিকে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে শুক্রবার তিস্তা নদীর অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা সকাল ৬টা হতে প্রবাহিত হচ্ছিল ৫১ দশমিক ৮৫ মিটার দিয়ে। তবে দুপুর ১২টায় আরও ৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে তিস্তা নদীর পানি ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করেছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার পরিমাপ (গেজ রিডার) ছিল ৫২ দশমিক ২৫ মিটার। কিন্তু তিস্তা ব্যারেজের একশ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার উজানে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবা নামক স্থানে তিস্তা নদীর ওপর একটি বহুমুখী বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত।

১৯৭৫ সালে ওই প্রকল্প শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এর আওতায় দার্জিলিং, পশ্চিম দিনাজপুর, মালদহ, দক্ষিণ জলপাইগুড়ি, কোচবিহার জেলা, বিহারের পূর্নিমা ও আসামের কিছু এলাকার ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সরবরাহ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ভারত ২২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করছে।

গজলডোবা ব্যারেজের বামে তিস্তা-জলঢাকা প্রধান খাল, ডানে তিস্তা-মহানন্দা খাল, মহানন্দা প্রধান খাল, ডাউক-নাগর প্রধান খাল ও নাগর-ট্যাংগন প্রধান খালের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর স্বাভাবিক গতিধারা বাধাগ্রস্ত হয়ে বাংলাদেশের অংশের ডালিয়াস্থ তিস্তা ব্যারেজের উজানের ২০ কিলোমিটার পলি পড়ে ভরাট হতে থাকে। ফলে বর্ষা মৌসুমে অথবা গজলডোবা ব্যারেজের জলকপাট খুলে দিলে বাংলাদেশ অংশে পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়া নদীতে অল্প পানিতে উপচে পড়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে থাকে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহের পরিমাপ (গেজ রিডার) সংখ্যাটি পরিবর্তনের প্রস্তাব করে। এতে ২০০৭ সালের ৭ জুলাই পূর্বের পরিমাপ সংখ্যা ৫২ দশমিক ২৫ পরিবর্তন করে ৫২ দশমিক ৪০ মিটার বৃদ্ধি করে। এরপরেও উজানের নাই পানিতেই বাংলাদেশ অংশের তিস্তা বারবার বিপদসীমা অতিক্রম করতে থাকলে নদীর পলি অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারই আলোকে ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও নদী ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষে ক্যাপিটাল (পাইলট) ড্রেজিং আর রিভার সিস্টেম ইন বাংলাদেশ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০১২ সালের মার্চ মাসে তিস্তার পলি অপসারণের জন্য তিস্তা ব্যারেজের উজানে ৫০০ মিটার ও ভাটিতে তিন হাজার মিটার এলাকায় পলি অপসারণের জন্য ২৩ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমের ওই সময় পলি অপসারণ করা হলেও পরবর্তি সময় নদী পুনরায় পলিতে ভরাট হতে থাকে। ফলে ওই পলি অপসারণ খুব একটা কাজে আসেনি।

এ অবস্থায় ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে গজলডোবার জলকপাট উম্মুক্ত করে দেয়াসহ ভারী বর্ষণের উজানের ঢলে ৯৮ বছরের মধ্যে পলিতে ভরাট তিস্তা অববাহিকায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। সেই সময় নদীর পানি বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৪০ মিটার অতিক্রম করে ৫৩ দশমিক ০৫ মিটার অর্থ্যাৎ ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। তাই তিস্তা নদীর বিপদসীমা পরিমাপ সংখ্যাটি দ্বিতীয় দফায় পরিবর্তন করে তা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব করা হয়।

ওই প্রস্তাবে এবার পরিমাপের সংখ্যা করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৬০ মিটার। যা গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর হতে কার্যকারিতা করা হয় বলে জানান ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম।

তিনি বলেন, প্রতি বছর বর্ষার সময় বিপদসীমার পরিমাপ করা হয়ে থাকে।

উল্লেখ যে, ভারতের সিকিম রাজ্যে হিমালয়ের ৭ হাজার ২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চিতামু হ্রদ থেকে তিস্তার উৎপত্তি। এ নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিলোমিটার। নদীটি ভারতের মেখলিগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে। যা নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা হয়ে নদীটি এসে মিলেছে ব্রহ্মপুত্রে। বাংলাদেশ অংশে তিস্তার দৈর্ঘ্য ১১৩ কিলোমিটার, অববাহিকা ১৭১৯ কিলোমিটার। অভিন্ন নদী বুড়ি তিস্তা নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ৩৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে নদীটি জলঢাকা উপজেলার কাছ দিয়ে তিস্তা নদীতে মিলেছে।

উজানে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় বিপর্যয় নেমে এসেছে ভাটিতে থাকা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে। উজানে পানি প্রত্যাহারে বাংলাদেশে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। তীব্র পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। হুমকিতে পড়েছে পুরো সেচ প্রকল্প। বাংলাদেশ এ বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেও ভারতের সঙ্গে পানিবন্টন চুক্তি করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ