সড়ক পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের পৈচাশিকতার শিকার হয়েছে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস।

প্রকাশিত: ১১:৪৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০১৯

ট্রেনটি উদ্বোধনের পরের দিনই ‘সড়কে যাত্রী কমে যাবে’ আশঙ্কায় পরিবহন শ্রমিকরা ট্রেনের বগি ক্ষত-বিক্ষত করে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট এবং রংপুরের যাত্রীরা এই তথ্য জানিয়েছেন। সাধারণ মানুষের দাবি, ঢাকার সঙ্গে রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার ডে (দিন) ও নাইট (রাত) কোচের শ্রমিক ও মালিকদের বিরুদ্ধে এই অপকর্মের দায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

ইন্দোনেশিয়া থেকে সদ্য আমদানিকৃত লাল-সবুজ পিটি ইনকা কোচ দেওয়া হয়েছে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসকে। একইদিনে উত্তরবঙ্গের আরও দুটি ট্রেন লালমনি এবং রংপুর এক্সপ্রেসের রেক পরিবর্তন করে নতুন লাল-সবুজ কোচ দেওয়া হয়েছে। অন্য দুটি ট্রেনে সব ঠিকঠাক থাকলেও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস যেন লল্ডভন্ড! সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া বেশ কয়েকটি ভিডিওতে ধরা পড়েছে এ লন্ডভন্ডেরদৃশ্য। উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের বেশ কয়েকটি কোচের বাথরুম থেকে উধাও হয়ে গেছে পানির ট্যাপ, টিস্যু হোল্ডার, টাওয়েল হোল্ডার, এমনকী বদনা পর্যন্ত উধাও! শুধু তাই নয়, কোনো ধারালো বস্তু দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে কেটে ফেলা হয়েছে বেশ কিছু আসন এবং আসেন পর্দা। ট্রেনটির বাইরে এবং ভিতরের বেশ কিছু লাইট চুরি হয়ে গেছে। দরজা অটোস্প্রিংও ভেঙে ফেলা হয়েছে।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উদ্বোধনের আগের দিন ট্রেনটি কুড়িগ্রাম স্টেশনে রাখা ছিল। বগিতে পানি সংগ্রহের জন্য কোচটি রংপুরে নেয়া হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির কেন্দ্রী নির্বাহী কমিটির সভাপতি নাহিদ হাসান নলেজ ইনকিলাবকে বলেন, কুড়িগ্রামে ভাল মানের ট্রেন চলাচল করুক- এটা যারা চাননি তারাই এসব কাজ করেছে। আমরা ধরনা করছি, বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা রেলের লোকজনের সহযোগিতা এগুলো করেছে।
জানতে চাইলে কুড়িগ্রামের রেল স্টেশন মাস্টার কাবিল উদ্দিন বলেন, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস উদ্বোধনের পরে পানি নেয়ার জন্য রংপুরে গিয়েছিল। সেখান সকল দরজা খুলে দেয়া হয়েছিল। কোচ ক্ষতবিক্ষত করার ঘটনা কুড়িগ্রাম স্টেশনে হয়নি। এটা গার্ড বলতে পারবে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে উদ্বোধনের পরে দিনেই বাস মালিক ও শ্রমিকদের আক্রমনে শিকার হয়। কারণ কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ ১৯৯৫ সাল থেকে বাসে করে রাজধানী ঢাকায় আসা যাওয়া করেন। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস চালু হওয়ার পর নাবিল, শ্যামলী, হানিফ, ডিপজল, এনা, হক, এস আর, এস এন পরিবহনসহ শতাধিক বাসে যাত্রী কমে গেছে। আগে যারা বাসে ঢাকা আসা যাওয়া করতেন তারা ট্রেনে আসা যাওয়া করছেন বা করবেন। সে কারণে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাস মালিক-চালকদের উস্কানীতে পরিকল্পিতভাবে ট্রেনের বাগির সিট, দরজা, বাথরুমের ট্যাপ ভেঙ্গে ফেলা হয় বলে অনেকেরই ধারনা।

কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের চুরি এবং লন্ডভন্ড ঘটনা নিয়ে রেলওয়ে খোঁজ-খবর করছে বলে জানা গেছে।

এদিকে নতুন ট্রেনটির এই অবস্থা হওয়ায় রেলপ্রেমীরা ক্ষুব্ধ। দেশের সম্পদ যদি দেশের মানুষ ধ্বংস করে- এর চেয়ে দুঃখজনক কিছু হতে পারে না বলে ফেসবুকে একজন আক্ষেপ করে লিখেছেন। অনেকেই এটাকে বাস মালিক-শ্রমিকদের পরিকল্পিত কাজ হিসেবে দাবি করছেন। কারণ ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটে প্রচুর বিলাসবহুল বাস রয়েছে। আবার অনেকেই স্থানীয়দের দায়ী করছেন রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের জন্য।

রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির কেন্দ্রী নির্বাহী কমিটির সভাপতি নাহিদ হাসান নলেজ বলেন, কুড়িগ্রামের মানুষের সুনাম নষ্ট করার জন্য এ কাজ করা হয়েছে। আজ শনিবার কুড়িগ্রামের এ বিষয়ে আমাদের সভা হবে। সেখানে আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাবো এবং সরকারীভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করবো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন নেতা জানান, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস চালু হওয়ার পরে নাবিল, শ্যামলী, হানিফ, ডিপজল, এনা, হক, এস আর, এস এন পরিবহনসহ শতাধিক বাসে যাত্রী কমেছে। তাদের লোকজনও তো এ গুলো করতে পারে? তবে আমি দেখি নাই।

জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে বন্ধ হওয়া পরে দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে গত ১৬ অক্টোবর ঝকঝকে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ট্রেনটির বাণিজ্যিক যাত্রা। কিন্তু উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টা পরেই এই রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করা হয়েছে। যা কেউই মেনে নিতে পারছেন না । দৈনিক নিউজ