শিক্ষকদের অধিকাংশ দাবিই পূরণ হয়েছে

0
319

শিক্ষা খাতে দাবির শেষ নেই। এর মধ্যে কোনো দাবি শিক্ষকের, কোনোটি ছাত্র-অভিভাবকের আবার কোনোটি সুশীলসমাজের। কিন্তু শিক্ষকদের দাবি পূরণের পাল্লাটাই যেন ভারি। শিক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবির বেশিরভাগই পূরণ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো হবে।

তবে শিক্ষকদের পূরণ না হওয়া দাবিগুলোর মধ্যে এমপিওভুক্তির বিষয়টিকে আলোচনায় আনছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, ২০১০ খ্রিস্টাব্দের পরে আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। অথচ এ সময়ে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির কারণে বিপুলসংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। কয়েক মাস আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন আহ্বান করে। এ সময় ৯ হাজার ৪৯৮টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়ে। তবে নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হচ্ছে না।

বৈশাখী ভাতা ও বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের দাবি ছিল ৫ লাখের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। শিক্ষকরা বলছেন, এ দাবি যৌক্তিক ও আইন অনুযায়ী প্রাপ্য। অবশেষে সরকার এ দাবিটি মেনে নেয়ায় শিক্ষকরা সন্তুষ্ট। সংশ্লিষ্টরা এটাকে দেখছেন নির্বাচনী উপহার হিসাবে। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল বাস্তবায়ন হলেও সরকারি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা থেকে বেসরকারি শিক্ষকরা বঞ্চিত হয়ে আসছিলেন।

অবসর ভাতা খাতে বাড়তি বরাদ্দের দাবি ছিল শিক্ষকদের। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টসহ বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য মোট ১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারিকরণ দাবি দীর্ঘদিনের। প্রধানমন্ত্রী এ দাবির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে প্রতি উপজেলায় একটি স্কুল ও কলেজ সরকারি করা হবে বলে ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণারও বাস্তবায়ন হচ্ছে। সাড়ে তিনশ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল সরকারি হয়েছে। গত আগস্টে জাতীয়করণ হয়েছে একত্রে ২৭১টি কলেজ। প্রতি উপজেলায় একটি করে কারিগরি প্রতিষ্ঠানের কাজও চলছে।

শিক্ষা প্রশাসনেও অধিক সংখ্যক কর্মকর্তাকে নিয়োগ পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। ক্যাডার থেকে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পর্যন্ত এ সব নিয়োগ ও পদোন্নতি হয়েছে।

শিক্ষা ক্যাডারে সহযোগী অধ্যাপক থেকে রেকর্ড সংখ্যক ৪০৯ জনকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে ২৪ অক্টোবর বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ৫৭৪ জন সহকারী অধ্যাপককে পদোন্নতি দিয়ে সহযোগী অধ্যাপক করা হয়েছে। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত ৬৩৪ জনকে দেয়া হয়েছে পদোন্নতি।

নিয়োগের ২৭ বছর পর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪২০ শিক্ষক পদোন্নতি পেলেন এবারই। তাদের মধ্যে ৩৭১ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং ৫২ জন সহকারী মাধ্যমিক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার ঘোষণাও এসেছে সম্প্রতি।

ঘোষণার প্রায় তিন বছর পর হলেও ইবতেদায়ি মাদ্রাসার ১৫ হাজার শিক্ষককে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা স্থাপন, স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল কাঠামো এবং বেতনভাতাদি সংক্রান্ত নীতিমালায় সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর ফলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মতো এ ধরনের মাদ্রাসার শিক্ষকরা বেতন ভাতা পাবেন ।

পূরণ হয়নি এমন দাবি: পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জাতীয়করণ, বাড়িভাড়া ও চিকিত্সা ভাতা আরো বৃদ্ধি, শূন্যপদে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের এমপিও প্রদান, শূন্যপদে নিয়োগের দাবি শিক্ষকদের।

এ ছাড়া অন্য দাবিগুলো হলো— ইনডেক্সধারী শিক্ষক, উচ্চতর স্কেল, উচ্চতর ডিগ্রি, বিএড ডিগ্রি, কামিল পাসের স্কেলসহ সব ধরনের আর্থিক সুবিধা দেওয়া, পাহাড়ি এলাকার শিক্ষকদের ৩০ ভাগ পাহাড়ি ভাতা দেওয়া, শিক্ষকদের মধ্যে বেতন বৈষম্য কমানো, ২০১০ খ্রিস্টাব্দে সর্বশেষ দেওয়া এমপিওপ্রাপ্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার বাদ পড়া এক হাজার ৪৪১ জনকে এমপিও দেওয়া, সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল উন্নীতকরণ।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষকদের বহু দাবি আছে। যেগুলো যৌক্তিক- সেগুলো পূরণের ব্যাপারে সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here