সরকারি চাকরিজীবীরাই সন্তানদের সরকারি প্রাথমিকে পড়ান না

0
99

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন রয়েছে, খেলার মাঠও আছে। অবকাঠামোও উন্নত। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এতো সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সরকারি চাকরিজীবীরাই তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিকে পড়ান না। এমনকি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরাও তাদের সন্তানদের পড়াচ্ছেন কিন্ডারগার্টেনে। গত বছর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এক প্রজ্ঞাপনে সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিকে পড়ানোর বাধ্যবাধকতা রেখে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু আদেশ জারির কিছুক্ষণ পরেই তা বাতিল করা হয়।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কি আসলে আস্থা এবং মানসম্মত শিক্ষাদানের জায়গাই আছে? নাকি আস্থা হীনতায় দিন দিন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি না করে কিন্ডার গার্ডেনে ভর্তি করাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো যে, সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতি বছরই কমছে। গত এক বছরে কমেছে সাড়ে ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এর আগের ২০১৬-২০১৭ বছরে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমেছিল ৭ লাখ। অভিযোগ আছে, মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করানোর জন্য সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করানোর বিষয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন।

সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। দেশে এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৮৬৫টি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৯৫ লাখ। আর শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় চার লাখ।

তথ্যমতে, সরকারি প্রাথমিক স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ২০১৫ সালে ভর্তি হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ ৬৭ হাজার ৭৬১ জন। পরের বছর ২০১৬ সালে ১ কোটি ৮৬ লাখ ২ হাজার ৯৮৮ জন এবং ২০১৭ সালে ভর্তি হয়েছে ১ কোটি ৭২ লাখ ৫১ হাজার ৩৫০ জন। এতে লক্ষ্য করা গেছে, প্রতি বছরই শিক্ষার্থী ভর্তির হার কমেছে। শেষ বছরে ভর্তি কমেছে আগের বছরের চাইতে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৩৮ জন। অন্যদিকে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমেছে। গত তিন বছরে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। ২০১৫ সালে ছিল ২০ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৬ সালে ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে এ হার এসে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ।

জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের বয়স, সামর্থ্য, মেধা ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় রেখে আকর্ষণীয়, উপভোগ্য, চিত্তাকর্ষক ও শিশুতোষভাবে শিখন কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে মোট ১১ হাজার ৯২৫ জন শিক্ষককে ১৫ দিনব্যাপী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে নীরব একটি সচেতনতার বিপ্লব ঘটেছে। দরিদ্রতার হার কমার প্রেক্ষিতে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত নব-দম্পতিদের মধ্যে জন্ম হার কমেছে। এ ছাড়া শহরেই শুধু নয়, এখন গ্রামেও কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটিও সরকারি প্রাথমিকে ভর্তির সংখ্যা কমার একটি কারণ হতে পারে। সব সরকারি প্রাথমিকে প্রাক-প্রাথমিক চালু করা হয়েছে। এই শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বাড়ছে বলে তিনি জানান।

প্রাথমিকে শিক্ষা ঝরে পড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিনামূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি দেয়া, স্কুল ফিডিংসহ নানা পদক্ষেপ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্কুলের ব্যাপারে আকৃষ্ট করছে। তিনি বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণের দিকে এখন বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) নির্দেশনার আলোকেই এখন মান সম্পন্ন শিক্ষার দিকেই বেশি নজর দেয়া হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান পদ্ধতি ও পাঠদান কার্যক্রমও বিন্যস্ত করতে ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। দেশব্যাপী ইংরেজি ভাষা শিক্ষার জন্য ‘ওয়ান ডে ওয়ার ওয়ার্ড’ এবং গণিত অলিম্পিয়াড চালু করা হবে।

শিক্ষা বার্তা-আ.আ.হ/মৃধা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here